কবিতা
সম্ভাবনার কথা
ফাগুন মাসের আগুন ঝরা প্রেমের দিন
ডাক দিচ্ছে দুর্লভ সেই অনাগত সুদিন
নূরুল ইসলাম লাবলু
১
উত্তম এক খাসির উদ্ভট বয়ান
যে চোখে ঝাপসা দেখে, চোরা চোখী মুগ্ধ যে প্রকৃত প্রেমিক,
তাকে না দেখে, অথবা দেখেও না দেখার ভান করে সরে যাক উপভোগী সময়।
মুহুর্ত গুলো
আরো বেশী
টাউট হোক।
দেখে টাস্কি খাক অনুরাগী ভবিতব্য।
খুব ভেবে দেখেছি আমি-
শেষপর্যন্ত অবহেলার পাত্র হতে পারি বড়জোর,
আদরের ধন না।
আমি যখন কাউকে স্বপ্ন দেখাই
সে বিশ্বাস করতে চায় না।
কেউ যখন আমাকে স্বপ্ন দেখায়
আমার পায় হাসি।
খুব ভেবে দেখেছি আমি
চুড়ান্ত বলি হতে পারার মত
আমি উত্তম এক খাসি।
………………..
২
প্রকাশিত হওয়া বা না হওয়া প্রসঙ্গে
অভিমান আর অর্জিত মর্যাদাবোধজাত অহংকার কি জময ভাই?
আমার খুব অভিমান হয়েছে তোমার ওপর।
কাঁপাকাঁপা ভালবাসার আলতো আঙুলসহ
চক-শ্লেট নিয়ে অনেকদুর অবদি যাই
লিখেফেলি অন্তর্গত শব্দ সম্ভারে বিবিধ বচন।
তারপর কি হয় হঠাৎ, জানিনা,
মুছে ফেলি। প্রকাশ করা থেকে বিরত হই।
সবাই বলছে প্রকাশিত হওয়ার সময় নয় এখন।
………………..
৩
পরিমার্জিত কলম ও পরিশোধিত আঙুল
পরিমার্জিত কলম
যেদিন থেকে পরিশোধীত আঙুলে রুপান্তরিত হয়েছে
সেদিন থেকে তার জায়গা হয়েছে পশ্চাদ্দেশে।
সুযোগে পিঠ চাপড়াতে চাপড়াতে পেট ও পিঠের দখল
দুবৃত্ত হাতেরা।
………………..
৪
দেশ সম্পর্কে
আমি একটা দেশের কথা জানি যেখানে
মানুষের আপাততঃ কোন প্রয়োজন নেই
অমানুষের প্রয়োজন আছে ঢের।
প্রতিমুহুর্তে প্রয়োজন-
১. নিপুন হাতের গুপ্তধাতক।
২. চিলে কান নিয়ে গেছে শুনে
কানে হাত না দিয়ে
চিলের পিছনে দৌড়াবে এমন
শ্রেণীপেশার বিভিন্ন লোক।
৩. স্বভাবে প্রচন্ড স্পর্শকাতর ও
যুক্তিহীন আবেগে বিশ্বাসী মাথাধোয়া পশু-
৪. অর্থপাচারকারী সেকেন্ড হোমের মালিক।
৫. চোর, ডাকাত ও মেধাবি শঠ- সমাজের
সবটুকু ক্রিম যাদের একার চাই।
আমি একটা দেশের কথা জানি যেখানে
মানুষ তৈরীর বিষয়টা প্রাধান্য পায় না।
হাকরা থাকে বদমায়েশ তৈরীর সমস্ত পথ।
বেঁচে থাকার জন্য লড়ে মানুষেরা
আর শয়তানরা আস্ফালন করে
আরোবেশী স্বাধীনতা চেয়ে।
আমি একটা দেশের কথা জানি
যেখানে প্রকৃত মানুষ চুপকরে
থাকার বিনিময়ে
………………..
৫
আস্থাহীনতার অভিব্যক্তি
হাতে হাত রাখবেন
দেখবেন হাত একা।
চোখে চোখ রাখবেন
দেখবেন চোখ নেই।
চেয়ে আছে সুদুর অতিত।
কাধে কাধ রাখবেন
দেখবেন কাধ নেই।
বুকে বুক
পিঠে পিঠ
গলায় গলা
লাগাবেন
দেখবেন গলায়
গলা নেই।
১৪৪ ধারা সর্বত্র।
পঙ্গপালের মত
একপাল
পিঠচুলকানো বড়ে
ছাড়া কোথাও
কেউ নেই।
পিঠচুলকানো ছাড়া
কোন কিছুই কারো
পছন্দ হচ্ছে না।
পিঠচুলকানো ছাড়া
প্রকৃতপক্ষে কোন
কাজও কোথা নেই।
কিন্তু আমিতো বিক্রি হয়ে গেছি মশাই
পুজিবিক্রি হয়
এমনসব নিলাম বাজারে।
তাছাড়া, মুখস্ত করে করে
লেখাপড়া শেখা মানুষ আমি
কি লিখবো কবিতা?
আমার হাত তাই
আজকাল কোন কবিতা লিখতে
পারে না। ইন এডিশন,
আমার দুই হাতে কলম
ধরার মতও আজকাল
কোন আঙুল নেই।
………………..
৬
জড়িয়ে গেছে যে জীবন
মাকে সেলাই করতে দেখেছি
বোনদেরও করতে দেখেছি।
বিয়ের পর দেখেছি বউকে।
এদের সবাইকে
দেখেছি একটা জিনিস ছাড়াতে
সেই জিনিসটা হলো জড়ানো
সুতার দলা। কিযে কষ্ট ছাড়ানো!
তারা পারতেন,
তারা ছাড়াতেন।
জীবন শালা
আজ যেন
তেমন জড়ানো
সুতোর দলা।
………………..
৭
চুড়ান্তবস্থা
আমি প্রতিদিন একবার করে লজ্জ্বাশরমের মাথা খাই
ওপরে উঠতে থাকার সময় আগে-পিছে ডানে-বায়ে
কোনদিকে তাকাতে নাই।
তোমার ঐ কথাটা আর
আমি বিশ্বাস করি না
হাসি? আজকাল কোন কথায়
দাতবের করে হাসি না
আমি গৃহপালিত হতে হতে
এমন একটা জায়গায় চলে
গিয়েছিলাম যে, আর জায়গা ছিল না ভেড়া হবার।
আমি এতটাই পশুপ্রবৃত্তির অধিকারী হয়েছিলাম যে,
আমার আর শেষ পর্যন্ত পশু হওয়ার দরকার পড়েনি।
সত্যি কথা বলতে কি, আমি যা বিশ্বাস করতাম
তা বলতাম না, যা বলতাম তা করতাম না।
এত এত মিথ্যা বলা রপ্ত করেছিলাম যে,
আমি একটা পর্যায়ে লক্ষ্য করলাম,
আমি আর ইচ্ছা করেও
একটা তুচ্ছ ধরণের
সত্য কথা বলতে পারছি না।
আমি গৃহপালিত হতে হতে
এমন একটা জায়গায় চলে
গিয়েছিলাম যে,
আর জায়গা ছিল না ভেড়া হবার।
………………..
৮
নিজের কথা যে টুকু জানি
দুই নলওয়ালা বন্দুকের সামনে
কিসের শিল্প?
কবে কখন শানদেয়া ধারালো
কোনকিছুর নিচে
শুয়ে পড়তে চেয়েছিল
কবিতা আমার?
কবে দেখিয়েছি সাহস আমি?
ছাপোষা
কেরানি আমি
বরাবরই
নেড়ি কুকুরের চেয়েও
অধম ছিলাম।
আমি সুনিলের মত কারো
পায়ের কাছে বসে থেকে
তার ভেতরের কুকুরটাকে
দেখতে চাইনি।
কোনদিনও না।
আল্লারকসম না।
বুঝতে না বুঝতেই অন্যের
হাতে পড়ে গেছে সবকিছু
পাকা ধানে সেই দিচ্ছে প্রবল মই।
যাকে বিশ্বাস করলেন সে এখন কই?
পাবেননা খুজে তাকে কারণ
জগৎ সংসার এখন সাংঘাতিক এক বাঁকে।
পালিয়ে গেছে সে কোন এক ফাঁকে!!
বিকেল, ২৮/০৪/২০১৬
………………..
৯
মনের গহিনে এই ছিল তোমার?
শোন, ৪৫ বছরের জীবনের বড় ট্রাজেডি হলো,
তোমাকে আজকাল চিনতে পারিনা। তোমার
হাসিহাসি মুখ, মিস্টিমিস্টি কথা, বার বার
কসম খাওয়া। চরিত্রের ঔজ্ব্ল্য কোথায় গেলো?
হারালো কোথায় ওয়াদা রাখা স্বভাব তোমার?
আমিতো আমার গোটা পৃথিবীটা বন্ধক
রেখেছিলাম তোমার প্রতিশ্রুতির প্রতি।
ভাবিনিতো কখনো হবে তুমি চরম ঘাতক।
এখন তুমি কার উকিল? কার ওকালোতি
কর তুমি কোথায় গিয়ে? কি মতি গতি।
………………..
১০
তোমাকে বলছি, হ্যা তোমাকেই
চুপ করে আছি তার মানে
এই নয়
যে সব কিছু নিয়েছি
তোমার মেনে।
মৌনতা সবসময়
সম্মতির লক্ষণ নয়
কতখানি নামা হলে পরে তুমি
বলবে নামা হলো প্রকৃত?
সবটুকু সমর্পণের পরও
শেষ পর্যন্ত আমি আশ্রীত?
ক ত টা নগ্ন হলে পুরোপুরি ন্যাংটা হওয়া হবে
চামড়া কতপুরু হলে আমাকে গন্ডার বলবে?
কিবোর্ডের ওপর রাখা নিজের জোড়া হাত
চিনতে পারি না। তারা ডিএইচ লরেন্সের
হোয়াই দ্য নভেল ম্যাটারস-কে
আনতে চায় এক লাইনে। কমলকুমার মজুমদারের
সারাজীবনের লেখাকে দুইপাতায়,
আক্তারুজ্জামানের উপন্যাসের জন্য বরাদ্দ দুই প্যারা।
শামসুর রাহমানের কবিতার জন্য শুধু
হাহাকার আর শুন্যতা।হুমায়ুন আজাদ?
তার জন্য কেউ নেই।
………………..
১১
অপেক্ষা
যে কোন সুন্দরের সংগা দেয়া আছে সে মুখে
আছে যে কোন দলিতের অবদমিত কন্ঠ, ভাষা।
আছে পরিপূর্ণ প্রেমের পরিপুষ্ট চাউনি সে চোখে
কবে মিলবে তার দেখা? হেটে মরে এই চাষা।
………………..
১২
দিয়াকে স্পর্শ করার শাস্তি
তার কাছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পূর্বপশ্চিম উপন্যাসের কবির মত
সমর্পিত হওয়ার মাঝে লজ্জ্বার কিছু নেই। কসম খোদার,
সবকিছু বন্ধক রাখা যায়, তার কাছে ।
তার দিকে তাকিয়ে স্বর্গের হাতছানি উপেক্ষা করা যায়,
জগতের সকল সুখ বাসি তার কাছে। সে ঢেউয়ের মত গ্রাস করে,
ভয়ঙ্করভাবে আছড়ে পড়ে, ভাঙে। সে এমন এক ব্যাথার মত, যা উপভোগ্য।
তীব্র জলচ্ছাসের মত সে, যার কাজ কেবলই হানা দেয়া, ভেঙে ফেলা,
প্লাবিত করা, দুমড়ে মুচড়ে অনেক দুরে নিয়ে গিয়ে ফেলা।
তার একমাত্র কাজ তার দিকে দৃষ্টি দেবে যে তাকে উদ্বাস্তু করে তোলা।
স্নিগ্ধ নয় সে মোটেই- সকাল বেলার মত,
তীব্র সে- দুপুরের মত, ঝলসাতে থাকে, সহজাত দাহ্যক্ষমতা আছে তার।
কিম্বা সে সাক্ষাত নরকের দ্বার, অথচ, সাবলিল ভাবে হেটে যাওয়া যায় তার দিকে-
কর্ণেল তাহের যেভাবে নিশঙ্কচিত্তে কবিতা আবৃত্তি করতে করতে
মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলেন অদ্ভুত এক বিচারের পর,
সেও অবলিলাক্রমে ওভাবে মুখোমুখি হতে পারে কাঙ্খিত মৃত্যুর,
দিয়াকে স্পর্শ করার শাস্তিস্বরুপ।
সুত্র: স্বপ্ন ও সংকল্পের সমীকরণ, নূরুল ইসলাম লাবলু
………………..
১৩
অনুভব
এই খানে স্পর্শ পাই, আর ঠিক এই খানে, গন্ধ তোমার
শিক্ষা, সংস্কার, প্রেমঅপ্রেম, বলতে কি, সবই তোমার
আগ্রাসন আর কাকে বলে! কার আর অধিকার তেমন
ভালই আছি, আমার মত আর দশ জন আছেন যেমন
এখানে পাই গন্ধ তোমার, এখানটাতে স্পর্শ, বিরহ
এখানটাতে উপেক্ষা থাকলেও, পাশেই ছিলো আগ্রহ।
………………..
১৪
যুদ্ধশেষে
সখের সাথে পাঞ্জা লড়ে
ক্লান্ত যখন হারার পথে
ছায়া তখন মায়া ছেড়ে
সুখের খোঁজে ভিন্ন পথে।
………………..
১৫
সীমান্তের অর্থ
সীমান্ত মানে কি? ভাববেন না কাটাতারের শুধু বেড়া
আতঙ্কের গোলাগুলি মনুষ্যত্ববোধের লাশ হয়ে পড়া
আমার কাছে সীমান্ত মানে অন্য কিছু, যেমন ধরুণ
বাধভাঙা আবেগের সামনে বদমায়েশির ধসে পড়া।
ইতিহাসে ধসে গেছে কৃত্রিম বিভেদের কত দেয়াল
দেখাও গেছে ধারণকৃত স্মৃতির মধ্যে প্রচুর ভুলভাল
বিশ্বাস করুণ কবিরা মিথ্যা বলে না, হে শুভ্র সকাল
প্রচন্ড স্বপ্ন সব রকম বেড়াকে মনে করে বাল ছাল।
………………..
১৬
ঢাকা শহর
ঢাকা শহরের অনেক ওপরে উঠুন, উঠেছেন তো?
দেখুন হেটে যাচ্ছেন দু’জন, দেখতে পারছেনতো?
একজন আলমাহমুদ আর একজন শামসুর রাহমান।
শুক্রাবাদ থেকে হেটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন
অন্যজন মগবাজার থেকে হেটে প্রেসক্লাবের দিকে।
মফস্বলের আমি ছাড়ুনতো মনযোগ আপনার দিকে।
দেখে শুনে রাখুন ভালমত ঢাকায় থাকেন যেহেতু
কথা না বাড়িয়ে বললাম, ধন্যবাদ, জনাব, তথাস্তু।
………………..
১৭
উপমা
মরমী সুরের মাঝে হারিয়ে যাওয়া মুহুর্তের মত ভাল লাগা তুমি
মোহের মাঝে আটকে যাওয়া ফাঁদ, বানভাসি মূলে চলে যাওয়া
অথবা ছাতিম ও কামিনীসমৃদ্ধ সুগন্ধময় ঐন্দ্রজালিক প্রহরা তুমি
মুক্তান্বেষী সাহসী সাতার, হাত ধরা মানেই ভিষণ ভেসে যাওয়া।
………………..
১৮
রাজনীতির অর্থ
রাজনীতি করবা? ধর্ম নিয়ে?
কেউবা আবার বাঁশ নিয়ে?
মাফ চাই ভাই মাফ চাই
কাদা মাটির মানুষ আমি
রক্তমাংসের শরীর,
উজির নাজিরে নাই।
রাজনীতির নিজেরই
একটা ধর্ম আছে
সুর তাল ছন্দ আছে
পাগল তোমার জানা নাই।
সুন্দরের প্রতিযোগীতা
সে রাজনীতি, সত্যের কর্ম
সে শান্তি আনার কাজ
বিপদ আটকানোর বর্ম।
রাজনীতি করবা? ধর্ম নিয়ে?
কেউবা আবার বাঁশ নিয়ে?
তার চেয়ে বরং ঘুমাই
সর্ষের তেল নাকে দিয়ে।
সচেতনভাবে ছিড়ে ফেলেছি প্রত্যেকে আমরা
চোখের পর্দা।
আমাদের দাড়িপাল্লাসমুহ একদিকে হেলে পড়া।
আমাদের বিবেক বন্ধক রাখা
ভ্রাতৃত্ববোধ মরে গেছে
পরমতসহিষ্ণুতা পরপারে
আমরা খুন গুম ভয়ভিতি অধর্ম নিয়ে আছি বেশ।
আমাদের তরুণরা স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দিয়েছে
বৃদ্ধরা মৃতুচিন্তায় স্থবির।
বৃত্ত ভাঙার মানুষ একটাও পাবেন না আমাদের
এখানে সৃষ্টিশীলতার কাজ একমাত্র হাত কচলানো
কুয়োর মধ্যে ঘোরা ফেরা করা।
………………..
১৯
এ এক আজব পৃথিবী
যেখানে প্রাইমারী স্কুলগুলিতে স্বর্গ থাকার কথা
সেখানে নরক দাড় করিয়ে রাখা। পড়ানোর কাজটি
গৌণ যে শিক্ষকের তার কাছে কোমল ভবিষ্যৎ
পড়ার আনন্দবঞ্চিত থেকে যায়। বড় বিষয়টিই থেকে
যায় অধরা।
কেরানি বানানোর যে কারখানা গড়ে দিয়েছিল
বৃটিশ মহাজনেরা তা তেমনই আছে। কলেজগুলিও তাই।
এখানে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ে সমাজের কাছে,
পলিটিশিয়ান প্রফেশনালকে পাঠ দেন,
আর যে মাসলম্যান মানি সমৃদ্ধ ভুতগ্রস্ত
তিনিই চালান পলিটিশিয়ানদেরকে।
দীর্ঘতম অমানুষটার হাতেই চলে এসেছে সবচাইতে বেশী অর্থ।
ভাবেন অর্থ নিয়ে যদি যেতে পারতেন ভিন্ন দুনিয়ায়!
আমরা শিল্প কিনি না, শিল্লী কিনতে চাই।
আমরা দৈবচয়ন মানি, শশ্মান চিনি কবর চিনি
স্বর্গ নরক বেহেশত দোযখ সব চিনি
শুধু মানুষ চিনি না।
মারনাস্ত্র হাতে দেন, দেখিয়ে দেব, আমরা কি পারি।
স্রষ্টার নামে মানুষ খুন করতে।
………………..
২০
আলিঙ্গন, মিলন ও বিসর্জন
আলিঙ্গনের আনন্দ তুমি
বিসর্জনের কান্না
মিলনের তৃপ্তি তুমি
বিশেষ মুহুর্তের আরনা।
………………..
২১
অভিলাষ
বেহেশতের অনন্ত যৌবনা গন্ধমানবীদের নয়,
মন চায় আভিজাত্যকে ছিদেম একবার করি।
বিচ্ছিন্ন তরুণের কথা আমি বলছি না,
উদ্দেশ্য দলবাধা
তরুণ আমার। জানেনতো, তারা
বিপথগামী হয় খুব কম,
বরং তাদের স্বপ্নকেই ঠেলে
দেয়া হয় বেপথে।
সম্মিলিত
তরুণদের বাজে লাগলেই, জানবেন,
আপনিই বাতিল
হয়ে গেছেন পুরোপুরি।
তুমি রবী যখন লুটায়ে পড়
ভক্তি ভারে, নত হও
আমি তখন কান্ড দেখি।
মোহকে পাশ কাটাই
মুক্তি খুঁজি অন্যকোথাও।
সময় পোড়ানো মন্ত্রণা তুমি
কাছে গেলেই উত্তেজনা।
সুখ তুমি আমার সর্বোপরি
অসহ্য অপেক্ষার যন্ত্রণা।
ভাবোতো ভিতিহীন লোভহীন কিছু মুহুর্তের কথা
একটি পৃথিবীর কথা
ভাবোতো তোমার জন্য কেউ অপেক্ষা করে নেই
একমাত্র মৃত্যু ছাড়া।
………………..
২২
তোমার সম্পর্কে
তোমার কোন ঘোর নেই? কি?
বলো কি? সত্যি সত্যি নেই?
তাহলে, তোমার রাতের কোন ভোর নেই।
………………..
২৩
পাগল, পাগলি ও কবি
এক পাগল বলছে তার পাগলিকে-
“ব্যথায় যহন ককায় ওঠো তহন ডাহো, মাগো
আন্ধারে মিলাইতে না পাইরা কও আল্লাগো?
তোমার দরকার মাইর মাইয়া, বোঝলা তুমি?
সুভাশাম আচ্ছামত যা দিবার পারি না আমি।
পাগল আমি সুখেই ছিলাম আমার কি দোষ?
সানাইদার সব হইলি তুই, তোর যত দোষ।”
আড়ালে থাকা কবি কহেন-
“বেশী কিছু না পাগল, যেখানে আছোস তোরা
সমান্তরালে কাছে কিনারে মরা আছি আমরা।”
………………..
২৪
শিক্ষাদীক্ষা
আর তো কিছু শেখোনি তুমি,
শুধু থার্মোমিটারখান গালে ঢোকাও। তাপ মাপো।
তারপর টেপাটেপিতো ভালই চালাও, চিন্তায় ডুবে যাও,
কিন্তু কি হয় জানিনা, শেষ পর্যন্ত পাই আমি উপসর্গের ওষুধ,
ঘটে কোন বিদ্যা তোমার, রোগ সারানো না বাড়ানো?
ডাক্তার হিসেবে আমার কাছে আর যাই হোক
তোমার কোন সার্টিফিকেট নাই।
………………..
২৫
শেষমেশ
উঠেছে নিলামে একটি দেশ, হাকডাক অনেকের, সর্বোচ্চ দরদাতা একটি দেশ।
স্বাধীনতা? সে এক সর্বোচ্চ সম্মানের নাম, প্রতিকি মরণে আপনার সবটাই শেষ।
আপনাকে আঁকতে হবে সন্ত্রস্ত সময়
ওয়াটার কালারে, আর তেলরঙে খোজা মানুষের প্রতিকৃতি।
মাত্র দু’জন রমণীর ছলাকলা দেখাবেন পেন্সিলে।
ব্যবহার করবেন ভারত কিমবা চায়নার রঙ,
কাগজও তাদের, শুধু পেপার ওয়ার্কটা
হতে হবে পিওর আমেরিকান স্টাইলের,
ড্রপও করবেন ওদের মত।
পারবেন না?”
………………..
২৬
ঢেউ
ঢেউবিহীন মানুষের জীবনে ঢেউয়ের প্রয়োজনে ছোড়া হয় ঢিল
নিশ্চল মানুষগুলি তখন ঢুলির মত দুলতে থাকে ভাসতে থাকে
শাসনের সুত্র হিসেবে বৃটিশদের আবিস্কার শেষপর্যন্ত সত্য থাকে
উন্নততর জীবনবোধ অক্ষম কলহপ্রবণদের কাছে অধরা থাকে।
………………..
২৭
পরাধীনতা ও স্বাধীনতা
নিজেদের গান নিজেদের সুরে বেধে না গাইতে পারার অপর
নাম পরাধীনতা। স্বাধীনতা সে এক সম্মানসুচক কবিতার নাম।
আমরা হলাম পরীক্ষানীরিক্ষার গিনিপিগ,
দেখি তোর কতটুকু চেতনা আর কতটুকু যাতনা।
কে তুই মুক্তিযোদ্ধার ছেলে বিয়ে করেছিস রাজাকার।
আমরা হলাম আঙুলের চাটনি
দেখি চেখে কতটুকু ঝাল কতটুকু আছে মিস্টি।
কাকে কে কতটুকু ঠেঙাস সেই দিকে আমার দৃষ্টি।
আমরা হলাম দিশেহারা চোখ
কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে পড়া বুদ্ধি।
আমরা হলাম পরীক্ষানীরিক্ষার গিনিপিগ।
নির্বোধ নিজেদের গান নিজেরা লেখ
সুরবাধ নিজেরা নিজেরা, দায় সারিসনে, যা।
গুড় বানা অমনি দেহিসকানে পিপড়ে সারবেধে দলদেবেনে।
………………..
২৮
দেখিয়ে দেওয়া
তোর বড় ভাই স্যার হয়ে যায় তোর ক্লাশে ঠিক যেভাবে
আমরাও সবাই পর হয়ে যাই তার কাছে ঠিক একইভাবে
যেই শুনি জ্ঞানের কথা অমনি পাছা দিয়ে সরাই।
বিভেদ ও অনৈক্যে সন্ধানে ব্রত হই, ক্ষমতার করুণ
কাঙাল। কে বলেছে তরবারী নয়
এখন হাতে যাদের পরমানুমন্ত্র তারাই হাতাচ্ছে সব,
কাঁপাচ্ছে দুনিয়া?
ভয়ঙ্কর মদন আমার এক
সারাক্ষণ বসে থাকে মনের ভেতর।
খালি স্বপ্ন দেখে সে গজনির সুলতান মাহমুদ
মন্দির লুটপাট, মারামারি,স্বর্ণরুপা, মণিমাণিক্য। কেন
দিক নির্ণয় ও অঙ্কশাস্ত্রের কথা মনে থাকবে তার?
আমি হলাম সেই আবাল
কিমবা কলুর বলদও, বলা যায়,
রিক্ত নিঃস্ব। প্রভুত সম্পত্তির পরও
যে কাঙাল সারাদুনিয়ায়। জ্ঞানের জন্য হাত পাতি
কিন্তু জ্ঞানীর গুস্টি উদ্ধার করি, এমন ত্যানা প্যাচাই
নিজেই সে ত্যানা ছাড়াতে পারি না দাড় কাকের মত।
এমন হতচ্ছাড়া আমি!
আমার অন্তর্গত পশু ধর্মগ্রন্থের অন্তরাত্না নয়
আওড়ায় তার শব্দ বাক্য অক্ষর শুধু।
আমি হলাম সেই মানুষ, বহুখন্ডিত, মিসকিন
পোশাকের আড়ালে
একখন্ড কর্তিত সম্পত্তি আছে শুধু যার-
এক মাত্র কাজ তার হক না হক গরম হওয়া ও
নেতিয়ে পড়ার আগে সামান্য পুলক লাভ।
………………..
২৯
আছি যেখানে সেখানে একটু শান্তিতে থাকি
হাতে তুলে নাও তোমার পতিত শক্ত
বাটের কোমল মাথার নরম তুলিখানা।
শিল্পীতো তুমি, ছবি আঁকতে জানতাম,
যাহোক, আমার আদেশ শিরোধার্য,
জানতো।
পেয়ে হারানোর বেদনা ছাড়া আর
কোন সমস্যা?
ভুলে যাও কে তুমি,
কি ছিলে তুমি-
কেবলি ভাবো এখনো কে আছো তুমি।
কল্পনা কর আকাশের রঙধনু,
মনে কর
তোমাকে দেয়া হয়েছে আজ
রঙধনুর সম্পূর্ণ নগ্নতা শনাক্ত করার
পরিপূর্ণ অধিকার।
আঁকো শিল্পীর উঠোন থেকে
তার জানালার দিকে ঘাড় বাঁকা করা
স্মৃতিঢাকানিয়া তুখোড় কোন
নদীর চেয়ে থাকা।
আঁকো লতার মত আশ্রয় করে
বেয়ে উঠে তোমাকে আকন্ঠ পান
করতে পারে এমন কোন নগ্নতা।
তা দেখে আছি যেখানে সেখানে
একটু শান্তিতে থাকি।
………………..
৩০
তুলনা
ফ্যান চালালে ঠান্ডা লাগে বন্ধ করলেই গরম
সিজনচেঞ্জের নাইরে কোন লাজলজ্জা শরম
কোনকোন সময় মরেই প্রকৃতঅর্থে বাঁচা যায়।
শিহরণে আনন্দ ও চরম পুলক লাভ করা যায়।
হাওয়া লাগারই শ্রেষ্ঠ সময় তোমার এখন।
প্রকৃষ্টতম সময় উপভোগের, দেখা নাচন।
………………..
৩১
আশির্বাদ
চিন্তা থাকলে থাক
দুশ্চিন্তা না থাকে।
শান্তি থাকার পাশাপাশি
অশান্তি যেন দুরে থাকে।
কর্ষণরত লাঙলের ফলার সাথে মাটির
আমি মাতাল ভালবাসি সেই সখ্যতাকে
আমি সভ্যতা বলি সেই সখ্যতাকে
সুন্দর বা সৃষ্টি বলি সেই সখ্যতাকে
আর পাগলের মত কামনা করি তাকে।
যাও, কাটাও এক সুন্দর সন্ধা,
ফেরো কবিতা বা গান নিয়ে।
গা ধুয়ে ভেজা কাপড়ে এ পথে হেটে গেছে কেউ একজন
কলম ধরে বসে থাকাদের উদ্দেশ্যে
সময় ছিলো না তার তাকিয়ে দেখার নিজের পিছন।
কোনডা রে যে তুমি কও কি?
গড়ায় পড়ে হাইসে মানুষ
গরম ভাত সরায় থুয়ে
তুমি পান্তায় খাও ঘী?
জমে যাওয়া দুঃখরা
প্রয়োজনীয় অক্ষর হোক
থাকুক গায়ে গায়ে শব্দের মধ্যে
শুয়ে বসে ক্লান্তি ঘোচাক
বাক্যের বিন্যাসে।
………………..
৩২
আগ্রাসন তুমি তফাত যাও
এটা হও সেটা হও
নদী তুমি দারুনতো
আমার হতে গেলেই
শুধু অজুহাত দাও।
ভারাক্রান্ত সময়ের দাবি
সাগরমুখি সকল নদীর
সবটুকু জল।
আগ্রাসন তুমি তফাত
যাও।
………………..
৩৩
পরিকল্পনা কনফুশিয়াস অনুসরণে
পরিকল্পনা ১ বছরের হলে ধান লাগান
১০ বছরের হলে গাছ
পরিকল্পনা যদি হয় ১০০ বছরের
শিশুদেরকে শিক্ষিত করে তোলেন-
কনফুশিয়াস।
………………..
৩৪
সময়
ঘুমন্ত অন্ধকারের নাক ডাকার শব্দ খাচ্ছে প্রতিবাদি ব্যাঙ
কংক্রিটের জঞ্জাল খাচ্ছে পুন্ড্রনগর থেকে জাহাঙ্গীর নগর
মনুষ্যত্ববোধ আর বিবেক খাচ্ছে সৃষ্টিশীল তারুণ্যের মাথা
আমি? আমি খাচ্ছি আপনার সময়, ক্লাউন জব্বর এক
আপনাকে আনন্দ দিতে মঞ্চে উঠে হা হা নিজেই হাসছি।
আমিতো নিজেই অস্থির, আপনাকে কি দেবো কাতুকুতু!
আহবানকারী হানিফ পাগলা অতঃপর আমাদের দিয়ে
লেফটরাইট করালেন।
আমি সহ আমরা সকলে ভালই পারছিলাম, অভ্যস্ত যারা
তাদের ভাল না পারলে কি চলে?
………………..
৩৫
I love you
“মন কেমন করা দুপুরের কাছে বন্ধক রাখা
মাতলামীর কসম, I love you”
“আজ থেকে ত্রিশ বছর আগে
এ কথা বলেছিলাম তোমাকে”
এক মাঝ বয়সি ভদ্রলোক যখন তার স্ত্রীর
কোলে মাথা রেখে আওড়ালো এই পঙতিমালা
স্ত্রী হাসতে হাসতে তাৎক্ষণিক বললেন,
“আমাকে নয়,
ও কথা বলেছিলে তুমি অন্য কাউকে”।
ঘরের দাওয়ায় চোপসানো বেলুন তখন
খুকুর হাতে হাওয়া
খুঁজছিলো।
হঠাৎ
বইমেলা থেকে বেরিয়ে উক্ত পুস্তক
হাটতে হাটতে সোপার্জিত স্বাধীনতার কাছে কিনারে
থমকে যান, তার সহচরও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হন;
পুস্তক ও তার সহচর স্বভাববহির্ভুতভাবে
দ্যাখেন
কয়েকটি সিসি ক্যামেরা মৈথুনে প্রবৃত্ত হয়েছেন
লোকজনের সামনে,
চারপাশে অসংখ্য পোড়া চা পাতা
ইতস্তত হাটছেন আর চা পানকারি খুঁজছেন।
পুস্তক খুন হবার আগে দেখেন
তার চারপাশের সমস্ত মানুষজন পরিপূর্ভাবে খোজা,
তাদের একটারও বিচি নেই।
কামবানানো কলা সম্পর্কে তাদের কিছুই
জানা নেই অথচ, অবাককান্ড,
মৈথুনরত সিসি ক্যামেরাদের দেখে তারা
যারপরনাই মজা পাচ্ছেন।
(এই প্রলাপ যিনি শুনলেন তিনি যদি বাচ্চালোগ হন
তাহলে তালি বাজান
বৃদ্ধ হলে হাতের মুঠো আলগা করে দেন।
যদি মাঝবয়সি হন তো মোতেন, তলপেটে হাত দিয়ে দেখুন
পেসাবে আপনার তলপেট ভারি। মনে রাখবেন,
তিনটি বেগ আটকানো অস্বাস্থকর, ১. মলবেগ, ২. মুত্র বেগ, ৩. সুক্রবেগ
সুত্র: ভৈষজ্যরত্নাবলী।)
ভুমধ্য সাগরের মত তোমার চোখ কিমবা পারস্যের মেয়েদের মত তোমার
মধ্যাংশ ই্ত্যাদি। কিমবা, তুমি হেটে গেলে বিদ্যাসাগর টাইপের
মত কিছু অক্ষর নাচের মুদ্রার মত ঢং করে, ইত্যাদি।
আদতে কোন কিছুই সত্য নয়, সত্য যা তাহলো
কমেন্ট করলে মুছে দেই, লেখা পড়ি কিন্তু
লাইক দেই না। যা ভাবি তা শেষপর্যন্ত
লিখতে পারি না। এলমেলো জীবনে
আতঙ্কটাই এখন আপন সবচেয়ে।
তার আর যাবার জায়গা নেই।
সেই থাকে পেচিয়ে শরীর
আর তার ছায়া
সর্বান্তকরণে।
………………..
৩৬
চক্ষুলজ্জ্বা প্রসঙ্গে
অপথালমোলোজিস্টদের বোর্ড বসিয়ে
ফেলে দিয়েছি চোখের পর্দা
ধুয়ে মুছে ফেলেছি বিবেক
মনরোগ সারাইকারের কাছে গিয়ে ।
বানমাছের কাছে শিখেছি
কাদার মধ্যে থেকেও লাগবে না গায়ে কাদা,
তার কায়দা।
যার মনুষ্যত্ববোধ নেই,
দাত কেলিয়ে হাসা ছাড়া তার আর কাজ কি?
প্রচন্ড ভিতির মধ্যে থেকেও যে মানুষ হাসতে পারে
আমি এখন তার প্রকৃষ্টতম উপমা।
অফিসে যাই আসি, বাজারে যাই, প্রাণিজ আমিষ কিনি, স্ত্রীর স্বাদু রান্না খাই, ঘুমাই, হাতমুখ ধুই, গা ধুই, বাচ্চাদের নিয়ে হাসি ঠাট্টা করি, রিক্সা করে মেলায় যাই
কিন্তু কোন কিছুতে মন নেই।
রবীন্দ্রনাথের জন্মবার্ষীকি,
বৃটেনের নির্বাচন, মোদির আসন্ন ঢাকা সফর,
ওক টানতেও অনুমতি নিতে হয়।
তবে যখন জিজ্ঞাসা করলেন পুলিশ অফিসার, আপনার পায়ু পথে কি?
বলেছি আমি, পায়ু পথে আমার একান্ত নিজস্ব আঙুল।
ঘুম ভাঙার পর দেখি খুব হালকা লাগছে নিজেকে।
বমি নিয়ে ঘুরছি পেটে
এ তল্লাটে
ওক টানা নিষেধ।
আজব দেশে আজব আজব তর্জন গর্জন
আড়ালে রয় মৌলিক মানবিক আবেদন।
মাতব্বর কেডায়? তোমাগো বাড়িতে?
মনু জানোনা? যে যহন চেতে ওঠে সে ।
যা চাই তা পেতে গিয়ে আর একটা কিছু হারাই।
মুখবাধা বস্তা জব্দ গিরো, চল জলের তলে যাই।
………………..
৩৭
সুতোর পুতুল
কার হাসানোর কথা
আর কে হাসায়
কে যে কখন কাকে
কিভাবে ফাসায়।
মানবতা
যাচ্ছে ধুয়ে
উপসর্গ
রোগ হচ্ছে
উঠছে ভেসে
উপকুলে
নিথর দেহে শিশু।
স্বার্থ যখন
অন্ধ তখন
বুড়োরাও সব
আবাল আবাল
মানুষ কেউ না
সেয়ানা সেয়ানা শিশু।
শিকার হচ্ছে
একটা ঢিলে
কায়দা মত
অনেক পাখি,
বিবেকের চোখ?
কোথায় দেখো?
এ মেরু থেকে
ওমেরু সব
পর্দা ফেলা আঁখি।
সংগবদ্ধতাকে সন্দেহের চোখে দেখি
দেখি পেছনে কোন উদ্দেশ্য আছে
একটা কোন দুর্বলতাকে পুঁজি করে
ভিন্ন কিছু বাগিয়ে নেয়ার ধান্দা আছে।
শয়তানি যখন শুভ্রতাকে আচ্ছামত খায়।
………………..
৩৮
কিএকটাবস্থা
মানুষতো তাই আমাদের
দম বন্ধ হয়ে আসছে না।
ঘুরতে হচ্ছে ফিরতে হচ্ছে
পিটানো তাস খেলতে হচ্ছে,
জমানো টাকা গুনতে হচ্ছে,
খেতে হচ্ছে শুতে হচ্ছে
কামের কাম সারতে হচ্ছে
হিংসার বীজ বুনতে হচ্ছে,
প্রাতকৃত্য সারতে হচ্ছে,
মানুষতো তাই আমাদের
দম বন্ধ হয়ে আসছে না।
কি লিখবো আর যেখানে মানুষের উদ্বাস্তু
হয়ে পড়ার কোন মূল্য নেই
পৃথিবী তো হয়েছে বৈশ্বিক গ্রাম একখান
দু:খ লুকানোর কায়দা নেই।
মুখ লুকালে লজ্জ্বায়?
এ মুহুর্তে কথা যদিও অনেক,
বন্ধু তুমি একটা শুধু শোনো-
পরিকল্পিত জঠরের উদ্বাস্তু সময়
তারকাঁটায় থাকে প্যাচানো।
কাকে কে ডাকে ?
কে শোনে কার ডাক?
বন্ধু তোমার সবকিছুতে
বিরাট বিরাট ফাঁক।
ঝিনুকের খোলসের নিচে মুক্তা আগলে থাকে যেমন-
মাতৃজঠরে যেমন ভ্রুণ-
তোমার আমার পৃথিবীটাই একটা বিশেষ পৃথিবী,
হয়ে ওঠে অচুল।
পাথরবুকে নাড়িস তুই প্রেমের কড়া?
প্রেমিক তুই? নাকি পাগল?
আমাকে চেয়ে দ্যাখ ছাগল।
যায়না দেয়া আমাকে ঐ মুক্তার ছড়া?
অর্জিত প্রেম ক্ষণিকের অমনযোগে
কার ঝোলায় যে গেল!
লালসবুজ রঙ শেষমেশ তুমি ছাড়া
আর কে পাহারা দেবে বলো?
হাইগে ছোছে না মুতে গলা পানিতে যায়।
গাছের গুড়া কাইটে পানি ঢালে আগায়।
হা হা হা জগতের সাড়ে সব্বোনাশ কইরে
অন্য জাগায় মাটিপানির খোজ চালায়।
শিল পাটার যুদ্ধে মশলার যায় প্রাণ,
শান্তির নামে যুদ্ধ কি করে হয় মহান?
শান্তিবাদিগণ প্রশ্ন এমন করেন বটে-
কিন্তু সব কথা কি সব সময় খাটে?
শিক্ষা যা আছে সব গেল নিমিষে বৃথা
হে যুদ্ধ কান্ড তোমার পরে ঠেকাই মাথা।
শব্দ করে হাসলে তুমি খোদার কসম
পদ্ম ফোটে মন পুকুরে
কেউ মানে না খোদার কসম
আমিই কেবল পদ্ম দেখি
আপন মনে ডুব সাতারে।।
গন্ধ বোঝো দ্বন্দ্ব বোঝো
শুধু ছন্দটা না, তাইনা?
ভাগের ভাগ বোঝো ভাল
যেখানে দেখিবে শয়তানি আর ষড়যন্ত্র
জানিবে সেখানে আছে প্রকৃত গণতন্ত্র
গোপনীয়তার মাঝেই গণতন্ত্রের মজা
স্বচ্ছতা? আমরাইতো রাজা মহারাজা।
অন্যের পোষা আগুনে পুড়ে মরি আমরা
আমাদের কান্ড দেখে বগল বাজায় তারা।
আমরা ও তারার পার্থক্য জানা নেই যার
হুশিয়ার, স্টাটাসটা একেবারেই নয় তার।
কোনদিকি যাব কও
ঘরের মদ্যি একা পুড়ায় পরাণ
জংগোলে বড় শুনশান
বাইরি রাস্তা জুড়া তার পার ছাপ
নিশিতিও ঘুম আসেনা, এ কিরাম পাপ!
বাকি থায়ে মরা গাং, ঘুলা নুনা পানি
ও গাঙ্গের হাওয়া খালি কোমে নাকি
বুকির দাপানি?
বিভেদের বীজ বোনো
আর লাভের কর গোনো?
কোন্ ধাতুতে গড়া মিয়াভাই
তুমি কি মানুষ কোনো?
শান্তি নেই শান্তি নেই
শুধু আছে হানাহানি
কুমতলবে কানাকানি
সুস্থতা আর বেঁচে নেই।
কথায় কথায় টুইট করি
ফেসবুকে দেই স্টাটাস
কারো কানে যায় কি
দীর্ঘশ্বাস আর হা-হুতাস?
…
৩৯
তালগাছ ও বাংলাগাছ
পিছুটানের কাছে পরাস্ত প্রেম,
আভিজাত্যের কাছে পরাস্ত সুঅভিলাষ ও
ইগোর কাছে পরাস্ত সংকল্প-
অল আর সেইম।
মানলি তালগাছ
নামানলি বাংলাগাছ।
৪০
ইতিহাস
ধেয়ে আসা শয়তানি
অন্যের প্ররোচনায়
বলা নেই কওয়া নেই একদিন
রুপান্তরিত হলো তাক করা বন্দুকে।
কিন্তু জোটবাধা মানবতা তার বিপরীতে
সটান রইল দাড়িয়ে মাটিতে পা ঠুকে “তর-মায়রে-বাপ”
পাইন আর দেবদারু গাছেদের মত সিনা টান টান।
দেখার মত সে দৃশ্য।
তাদের সম্বল ছিল আত্নমর্যাদা, জেদ আর দৃঢ়তা।
লিখিত আছে দলিলপত্রে,
এরকম স্বভাব তারা পেয়েছিল উত্তরাধীকার হিসেবে।
তাদের বাপদাদাদের ছিল বুলেটের বিপরীতে
গুলতির বাট হাতে
তীব্র লড়াই শেষে জেতার ইতিহাস।
………………..
৪১
রাজনীতিবিদের কান্ড
যেই গিয়েছে লংকায় সেই হয়ে গেছে রাবণ,
স্বাধীনতার মূলমন্ত্রকে নির্লজ্জ করেছে ধর্ষণ।
স্বস্তি কিনতে বাজারে যায়
আর ছটফট করে ভেতরে ভেতরে
রুজভেল্টের মত,
প্রতিনিয়ত ভেবে চলে
মুক্তির পথ।
………………..
৪২
মুলো নিয়ে ছন্দ
মূলোর জন্য
মুখিয়ে থাকা
ভোদড়দলের
প্রধান ভোদড়
আমি ছিলাম।
একদিন ঠিক
পেলাম সবাই
সবার হাতে
দেখার মত
লালসাদা মুলো।
অবাক কান্ড!
মূলো হাতে
শরীরে দেখি
কি যেন নেই
মানুষের মত।
লজ্জাপাওয়ারও
সময় ছিলনা।
তাড়া তাড়ি
পিঠে কুলো
কানে তুলো।
………………..
৪৩
আঙুল না থাকার বিষয়টা
বিকালবেলা বলির পাঠা কিনতে গিয়ে দেখি
বটতলার বাজারে মুরগী হতে চেয়ে মুখিয়ে
আছে কিছু মানুষ।
তাদের পরণে টিশার্ট। ভালকরে তাকিয়ে দেখি সেসব টিশার্টের
ওপর বেশকিছু পরিচিত
দেশের মানচিত্র আঁকা। হাসবেন না প্লিজ।
আমি মোটেও হতভম্ব হইনি।
সেই সব দেশ সম্পর্কে ভূগোল বইয়ে ছোটবেলায়
হাটুগেড়ে গোল হয়ে বসে আমরা ভাই-দা’রা
ভাল মত পড়েছি। অবশ্য, আমাদের লজিং মাস্টারের
কাজই ছিল মুখস্ত করানো। তিনি আমাদের interpret করা শেখাননি।
ছোটবেলা থেকেই আমরা বুঝতে নয়
কেবলি মুখস্ত করা শিখেছি।
হাসবেন না প্লিজ।
খুব অবাক হয়ে যাই আমি, জানেন,
আজকাল
আমার মাথায় বিবিধ কবিতার দৃশ্যকল্প
আঁকতে চেষ্টা করেন কতিপয়
ল্যাটিন আমেরিকান কবি।
খুব নামকরা তারা।
যেমন-
Jorge Luis Borges,
Giannina Braschi
Nicolás Guillén,
Vicente Huidobro,
Vinicius de Moraes,
Carlos Drummond de Andrade
Gabriela Mistral,
Pablo Neruda….
………………..
৪৪
সৎ ও অসৎ শাসকের সংজ্ঞা
বিপজ্জনক শাসক খোঁজেন শত্রুতা
সৎশাসক অপরদিকে মিত্রতা
তার হাতে থাকে স্বচ্ছতা,
অংশগ্রহণ ও জবাবদিহিতা।
………………..
৪৫
পালিয়ে গেছে সে কোন এক ফাঁকে!!
হাঁসফাঁস হাঁসফাঁস
আছি ভালই শুধু পশ্চাদ্দেশে
একখানা আচাছা বাঁশ।
অবাককান্ডের সাথে বসবাস।
করার কিছুই নেই কারোরই যখন
বেঁচে থাকা কিম্বা মরে যাওয়া জানি
দুইই সমান সমান তখন।
আকাশ থেকে নক্ষত্রের পতন।
এভাবে, অজান্তেই একদিন আমরা
শামসুর রাহমানের কবিতার মত
হয়ে গেছি সকলে বস্তুত (দৃ:স্বপ্নে একদিন)
থতমত আচ্ছামত।
খাচ্ছি দাচ্ছি ঘুমচ্ছি কাজ করছি পার্কে যাচ্ছি
সরকারী বাসে চড়ছি দরকারি কাগজ পড়ছি
ঝাঁকের কই ফের মিশে যাচ্ছি ঝাঁকে-
জগৎ সংসার তখন কিন্তু সাংঘাতিক এক বাঁকে।
ওলো, চোখে ধুলো দিয়ে বিশাল বিশাল অন্ধকার
ও আগাছার পাল বংশবৃদ্ধিতে মশগুল,
প্রতিদিন হাত পা গজাচ্ছে প্রতিটি কথার, সাথে শুল।
জানেন, আমি কিন্তু মোটেও মাখিনা গুল।
দৃশ্যপটে যে নেই খালি তার দোহাই
নেপোয় মেরে দিচ্ছে হাড়িহাড়ি দই।
যেখানে রাত, আমি সেখানেই শুই।
চালন বলে ‘তোর পাছায় ছিদ্র সুই’।
তোমার? কেন ডেকেছিলে যখন এইছিল মনে
তোমার? আহারে! এইছিল মনে? গহিনে?
সন্ধা রাত্রি, ২৬ এপ্রিল ২০১৬, মঙ্গলবার।
………………..
৪৬
হাটে ওঠার পর
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৈয়ার হাট মাত্র কয় কিলোমিটার
হাটতে হাটতেই চলে গেলাম একা একা এক বিকালে হাটবার।
গিয়ে দেখি মুখবাধা সারি সারি শষ্যের বস্তা মধ্যবিত্ত দামে
কয়াল বেচছেন নিরিহসব মানুষের কাছে মনুষ্যবোধের নামে।
কৈয়ার হাটের পাশেই নদী আছে এক, দুই ব্রিজ ওপরে তার
পাশাপাশি তারা আছেন, একজন কংক্রিটের, একজন লোহার।
কর্তিত কতিপয় আঙুলের শোকে একপাল কলম কাতর
মধ্যপ্রাচ্য নয়, মাখি আমি এখন উপমহাদেশের আতর।
………………..
৪৭
স্বৈরাচারীর বক্তব্য
এই টুকু হাত চাই আমার, ঠিক এই টুকু, তার বেশী না
বাকিটুকু ছেটে দেবো। শাসনের সুত্রে সবটুকু মানবোনা
কথা? যতটুকু কাজে লাগে, বা মেলে, ততটুকু শুনবো
বাকিটা? এক কানে শুনে অন্যকান দিয়ে ফেলে দেবো।
শুধু শাসনের সুত্রে যতটুকু, ততটুকু। বেশী মানবো না।
………………..
৪৮
তোমার চেহারা
ইলিশ খোঁজো ইলিশ? গোপালগঞ্জের সরপুটি? কাঁচকি?
তুমিতো পুরোপুরি সেই জাত, একদম মা কালি যাদের
মরে যাবার পর মনে পড়ে এই খানে তাদের নদী ছিলো
মরার আগে মনে পড়ে তারা মানুষ, একখান ধর্ম ছিলো
রাত শেষ হলেই জানে জেগে থাকার প্রভুত কারন ছিলো
সময় ফুরোলে মনে পড়ে আহা অনেক কিছু করার ছিলো
পরস্পরকে ভেবে মোটামুটি শক্ত হবার প্রয়োজন ছিলো।
তুমিতো পুরোপুরি সেই জাত চোখ বন্ধ খোদার কসম
মরার আগে বার বার যাদের মরে পড়ার স্বভাব ছিলো।
আর কামে নয় নামে যাদের ধর্ম খোজা স্বভাব ছিলো।
জানোনা কখন তুমি নিলামে ওঠো, আর কখন বুকে ।
উচিত অনুচিত বোঝনা ঠেলে সরাও আপন যে তাকে।
………………..
৪৯
ছদ্মবেশ
সাংঘাতিক সামন্ত যুগ আছে তার মাথায়
শরীরটা পড়ে রয়েছে শুধু বর্তমান জামানায়।
………………..
৫০
পরামর্শ
ভাত না পাও জোছনা খাও বিদেশী না পাও বাংলা খাও
তবু খাও, আর দু:খের দিনে না পারো সুখের সময় যাও।
………………..
৫১
প্রেম ও অপ্রেম
তোমার চোখের চেয়ে থাকার কাছে, যেতে চায় আমার চোখের তাকিয়ে থাকা। পৃথিবী উল্টে যাবে শুনি, তুমুল গোলাগুলি হবে। বৃষ্টির ফোটার মত ঝরে যাবে প্রাণ মানুষের। যাক। কসম কিচ্ছু যায় আসে না তাতে আমার। মনে আছে সেই ইংরেজী ছবিটার কথা? গাছের পাশে দাড়িয়ে দুজন দুজনকে চুমু খায় একদিকে, আর, অন্যদিকে, অগ্নীগীরির লাভা উদগীরণ হতে থাকে?
প্রেম যদি অমনযোগীই না করলো, উপেক্ষা না করতে শেখালো পরিপার্শিকতা, যদি তা মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতই না করলো তোমায়, আমি শিওর তোমার সে প্রেমে ভ্যাজাল আছে।
………………..
৫২
কবিতার সাথে কথোপকথন
দ্যাখো, ভিষণ আমি সাদাসিধে সাতেও নাই পাঁচেও নাই
সবকিছুতে থেকেও আমি সত্যিসত্যি কোনকিছুতে নাই।
কবিতা বলল, ভাগো তুমি, একটা ফোটাও খায়েশ নাই
আমার একখান কালারফুল পুরোদস্তুর রঙের মানুষ চাই।
শুন্য হাতে ফেরার পথে কবিতাকে বললাম, চল বাড়ী চল
কবিতা বলল, কেমন ধাঁচের মানুষ তুমি সেইটা আগে বল।
………………..
৫৩
ভালবাসা মানে
মুখের কথা মনে, মন রেখেছি মুখে। দেখি আমি একদিন দাড়িয়ে নত মুখে। যে চোখে ঘুম নেই সে চোখ বইয়ের পাতাদের, স্বপ্নের, দুরবর্তী ভবিষ্যৎ দেখতে জেগে থাকা মোহের। ভালবাসা মানে সৃষ্টির জেদ, সংকল্প। ভালবাসা মানে মনের গভীরে মণীষার উন্মেষ।
………………..
৫৪
প্রস্তুতি
তুমি গেট গলে ভেতরে ঢুকে যাবার পরও
আমি দাড়িয়ে ছিলাম রাস্তায়, সারারাত।
বলতে পারো, পাগলের মত মনে হয়েছিল
যদি উঁকি দাও, একবারের জন্য হলেও।
সিগারেট বাতিল, ছাড়লাম আজ থেকে,
ঠোট মুখ আঙুল যা ধরতো সিগারেটকে
কালথেকে তাদের ধরতে হবে অন্য কিছু
তার প্রস্তুতিই, জনাব, নিচ্ছি আজ থেকে।
………………..
৫৫
অনুরোধ
সীমাবদ্ধের শ্রেষ্ঠত্ব দাবী সাজে না
শিক্ষা ছাড়া শান্তি আনা সম্ভব না
জানতো,
সীমার বাইরে যাওয়ার বিষয়ে
বারণ আছে আল-কোরানে
কথায় কথায় আকাশে তাকাও,
আল্লাহ নয় শুধু আসমানে
মানতো?
ফেরো তুমি অন্তরে, বুঝলে? শব্দের উত্পত্তি যেখানে
জগতের অস্তিত্ব আর শান্তি যেখানে, থাকো সেখানে।
………………..
৫৬
নবাব নন্দীনি
নবাব নন্দীনি
নবাব নন্দীনি
পথেই আছি
ঘাটে যাইনি
পায়ের নিচে
আমার মাথা
বন্ধক রাখিনি
দিন দিন যা
হচ্ছেটা সব
কপালের ফের
আগে বুঝিনি,
নবাব নন্দীনি
মুতে গেছি
গলা পানিতে
হাইগে ছুছিনি
নবাব নন্দীনি।
………………..
৫৭
স্বীকৃতি
স্বীকৃতি, জানি বিলক্ষণ, তোমার দেখা সহজ নয়
সত্য এও, তুমি ছাড়াও জগতে অনেক কাজ হয়
সূর্য ওঠে অস্ত যায় দিনের শেষে রাত হয়, সুতরাং
তোমার পিছে ছুটে আমি জীবন থেকে পালাচ্ছি না
ব্যর্থতার মজা, অন্যদিকে, কাউকে নিতে দিচ্ছি না।
………………..
৫৮
বন্ধের দিনে কন্যাদের বক্তব্য
এই যে তুমি ডাকছি তোমায় মেয়েরা তোমার
আজও বই ল্যাপটপ! কেমন বাবারে, অ্যা?
ফেলে দাও পড়া ফেসবুক নেটফেট চ্যাট
চলো পুকুরে নামি, সাতরাই, হ্যা?
………………..
৫৯
আগমনের বার্তা
নির্বাসনে তার অনেকদিন যাবৎ আরাম,
সৃষ্টির ঘোরে আছে সে, ঘুম তার হারাম।
চালাচ্ছেন তো! কিছুই চলছে না ঠিকঠাক
বেবাক বেঠিক, সবখানে ফোকর আর ফাঁক।
চালিয়ে যান কামান বন্দুক বোমারু বিমান
নেই দেরি, আসছে সে কাঁপিয়ে আসমান।
………………..
৬০
ভালমানুষেরা দেয় সুখ
খারাপেরা অভিজ্ঞতা
খারাপতমরা দেয় শিক্ষা
সর্বোত্তমেরা রাখে স্মৃতি।
………………..
৬১
পাঠকের প্রতিকৃতি
আজ কাল সবকিছু নগদ নগদ একদম হাতে হাতে চাই
এক লাইন দু’লাইন, তার বেশী হলেই মরণ পাঠক নাই।
………………..
৬২
অবস্থা
চেয়ে থাকা? প্লেটোনিক কোনকিছু? অপেক্ষা? ফোটো
অথবা চাটো বেদম, মাতাল এসো, প্রস্তুত শরীরে ওঠো।
………………..
৬৩
উসকানি নয়, সাবধানবাণী
খোচাচ্ছিস খুউব, আল্লার কসম অসহ্য, ভাবিস কি তুই?
বুনো টিয়ের মত পারি কিন্তু আমরাও, ভুল বুঝেছিস তুই।
কোন সে খায়েস নিস্তেজকে জাগাস, মজা লস তাইনা?
প্রচন্ড ঢুকে যাই আমূল আমরা টেকনাফ টু তেতুলিয়া।
আমরা কিন্তু অনন্ত কাল, একবার শুরু করলে থামি না
কাঁদো হাত পা ধরো মাফ চাও শেষ না হলে ছাড়ি না।
………………..
৬৪
ধর্ম ও ঈশ্বর
ধর্ম মানে কি? ধর্ম মানে সত্য হলো বস্তুগুণ।
স্বভাবে সহজাত কিছু সুতিব্র লাগানো যা তার
শনাক্ত করা যায় স্বভাবে সে কেমন। তুলনায়
ঈশ্বর? সিম্পল সেন্টেন্সের কমপ্লেক্স উত্তর।
………………..
৬৫
আমি তো জানি আমি কি
অধিকাংশেরই উচিত লোকালয় ছেড়ে দেয়া
আমাদের
বন্য জীবনযাপন-
যতই উপরে উঠি না কেন, চোখ পড়ে থাকছে নিচে।
মড়ার দিকে, শকুনের মত।
দেখতে মানুষের মত হলেও
আমরা আদতে শেয়ালসমতুল্য।
চারিত্রিক চাতুর্যে আমরা মিথ্যার প্রবল বেপারী।
একেকজন সুযোগ পেলেই প্রবল
ছাল চামড়া তুলি ধ্রুব তারার মত জ্বলতে থাকা সত্যের,
ইতিহাসের, যুদ্ধের প্রকৃত কারনের।
আমরা গরুর মত হাম্বা ডাকি, ছাগলের মত কাইকুই
করি আর মূলত চঞ্চলতা দেখাই চড়ুই পাখীর মত।
আর খালি পড়ে পড়ে স্বাধীনতা চাই মোরগের মত।
অন্যদের বেলায় বাঘের মত
নিজেদের ক্ষেত্রে মেনিমুখো বিড়াল
পরস্পরের পিঠ চুলকাই। আত্নরতিপ্রবণ অভাগা।
বেপাড়ার কুকুরের অনধিকার প্রবেশ ঠেকাতে মরিয়া।
নেটিভ নেড়ি
যেমন লেজ নাড়ে আর প্রবল আক্রশে ফেটে পড়ে,
আমরা ঠিক তেমন অন্যের প্রতি।
এমন অসহিষ্ণু আমরা কেউ কেউ কখনো কখনো যে,
ভুলে যাই আমরা নিজেরা কেমন।
ভাগাভাগিতে
প্রকৃত অর্থে বানর আমরা, সারাক্ষণ চোখ রাখি নিজের দিকে
খানিকটা বেশী কি করে নেয়া যায় দেখি।
আমাদের অভিধান থেকে শুভ শব্দেরা পাতাসমেত উঠে গেছে।
আমাদের তখন একটুও বাধবে না।
কারণ কেউ না জানলেও আমিতো জানি
ভেতরে ভেতরে আমি কে, আমি কি?
আমিতো জানি আমিও নিজেকে
কতখানি শ্রেষ্ঠ ও একমাত্র ভাবি।
আমিতো শুধু বর্তমানের শক্তিহীনতার মাঝে
লুকিয়ে রেখেছি ভবিষ্যতের শয়তানি।
আমাকে বোঝা যাচ্ছেনা কিন্তু
আমি তো জানি আমি কি।
………………..
৬৬
ওয়েল, দেন, আমি আলাদা
রবীন্দ্রনাথের নোবেল ততটা টানে না
নাইট প্রত্যাক্ষাণ যতটা।
তরুণ রবীন্দ্রনাথ নয়
আমি ভালবেসেছি বৃদ্ধকে।
তোমরা যাকে আপদমস্তক তরুণ ভাবো
আমি তাকে ভাবি তরুণ বয়সের বৃদ্ধ
যে শুধু শেষ বয়সে ঋদ্ধ।
ওয়েল দেন আমি আলাদা।
ব্যাখ্যা? যা ভাগ ভোদাই বইবিমুখ মেনিমুখো
অন্নদাশঙ্করের যুক্তবঙ্গের স্মৃতি দ্যাখ গে যা।
প্রমানিত হয়েছে যে,
প্রচলিত ধর্মকে পাশকাটিয়ে অন্যরকম ধর্মকে
আশ্রয় করেছে যারা, যুগে যুগে, তারাই ইতিহাস।
সক্রেটিসের মৃত্যু, গ্যালিলিওর শাস্তি, নজরুলের নাস্তিক উপাধি।
সব আমার মুখ থেকে শুনবেন? দয়াকরে আপনারাও কিছু বলুন।
………………..
৬৭
পাগল, আগে নিজিরি চেন
পাগল, আগে নিজিরি চেন
দ্যাকতি তোরে নাড়ায় কিডা
নাড়ায় যে সেই তি তুই।
পথের মাঝে থামায় যে
পথে পথে যে হাটায়
ভাবায় যে, ভান করে
ভুল করে যে, জীভ কাটে
উষ্ণতা খোজে, কাতরায়
কান্দায় কিমবা হাসায়
গুনগুন করায় মনের অজান্তে
নাচায়, সেই তি তুই।
পাগল, আগে নিজিরি চেন
দ্যাকতি তোরে নাড়ায় কিডা
নাচায় কিডা।
পঞ্চাশের ঘরে বয়স গেল
নিজিরি চিনলি না?
………………..
৬৮
অনুভূতি
কত কত দিন গেছে হাটতে গিয়ে মনে হয়েছে
হাটার পাশে থাকলে কেউ কেমন হতো
কত কত রাত গেছে মনে হয়েছে প্রকৃত
মানুষ থাকবে শুয়ে সেই মুহুর্ত কেমন হবে?
………………..
৬৯
রাত ও দিনের পার্থক্য
চোখ নেই যার তার কাছে দিন কি বা রাত কি।
ফুয়ের আগুন নিভে গেলে উর্বশী কে হুরইবা কি।
………………..
৭০
দরপত্রবিজ্ঞপ্তি
হাটতে পথে হঠাৎ দেখি, একটুকরো সাদা কাগজ
ভিষণ এক ইচ্ছে নিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
তাকে আমি দেখতে দেই আমাকে, দাড়িয়ে পড়ে। তারপর
তাকে পড়তে দেই আমার দুটি চোখকে আগাগোড়া।
একজন স্থাপত্যবিদ তিনি, আমার অনুমান, যার কাগজ।
আচ্ছা স্থাপত্যের কি কোন ভাষা আছে?
জানি তার নক্সা হয়, কিন্তু কোন ভাষা?
চলুন তার পঙতিগুলি পড়ি।
“দরপত্র আহবান আহবান করেছে
সিটি কর্পোরেশন।
সিটি কর্পোরেশন?
ওমা সে এক সাংঘাতিক স্থাপত্যকলা
যার সামনে দাড়ালে
স্মরণ পড়বে আপনার ঔপনিবেশীক আমল।
মুখোমুখি হলেই, সত্যি বলতে কি, সেবা চাওয়ার সাহস হারিয়ে যাবে
মুহুর্তের মধ্যেই।
দুহাতে আহবান করে না সে স্থাপত্য, কেবলি ভিতি সঞ্চার করে।
তার দাড়িয়ে থাকা আপনাকে দুরে সরিয়ে দেবার মত ভয়ানক।
জাইগেনটিক শরীরে তার দুচোখ ভিষণ
পাকানো। তবে ভয় নেই, মরে যাবার দশা হলে
সমস্যা নেই, আপনাকে নেওয়ার মত অনেক
হাসপাতাল আছে আশেপাশে।
বিষয়?
দ্ব্যর্থবোধক ন্যাতানো তুলিতে।
………………..
৭১
হেলাল হাফিজের কবিতার প্রতিক্রিয়া
হেলাল হাফিজের কবিতার প্রতিক্রিয়া যেখানে তিনি বলেছেন মানুষে যদি কাউকে পোড়ায় তাহলে কিছু থাকে না, আগুনে পোড়ানোর পর তবু ছাই থাকে।
মানুষে পোড়ানোর পরও একটা গোটা মানুষ থাকে।
অন্যরকম এক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মানুষ থাকে।
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার অনেক কাজ থাকে।
………………..
৭২
প্রস্থানের সময়
ব্যারামের নামে আরাম কইরা রাজনীতিরে কলা দেহাইলা
কেউ না জানলেও আমি জানি কিসের বিনিময়ে কি করলা
আমরা যে হালায় স্বাধীণ না তা আঙুল তুল্যা বোঝায় দিলা
টেকনাফ টু তেতুলিয়া গরমাগরম আচ্ছা মত হান্দায় দিলা
গোলাম তুমি যাইতে যাইতেও ভাল একখান সওদা করলা।
………………..
৭৩
পরিণতি
আমি কি আর আছি আমি? নিজের মধ্যে?
পুরানো সেই একান্ত আমার নিজস্ব আমি?
মনটা আমার কেটে পড়েছে শরীর রেখে।
এইমুহুর্তে নিশ্চিত সে তোমার কাছে।
যা একখান কান্ড হবে খুঁজলে কেউ।
আমাকে কেউ খুঁজতে এলে পাঠিয়ে দেবো
তোমার কাছে, দুনিয়াদারি উল্টে গেলেও
পাঠাবো তাকে তোমার কাছেই
সত্যি বলছি দেখো তুমি।
………………..
৭৪
আমি
আমি হলাম সেই মানুষ
পোশাকের আড়ালে
একখন্ড কর্তিত সম্পত্তি আছে শুধু যার-
এক মাত্র কাজ তার হক না হক গরম হওয়া
এবং নেতিয়ে পড়ার আগে সামান্য পুলক লাভ।
আমি সেই খন্ডিত কুপমুন্ডুক
যার নজর শুধু মধ্যযুগে হারানো তরবারীর দিকে,
গণিত ভুগল বা অন্য কোন মৌলিক জ্ঞান
যার কাছে বেদম বাতিল। আমার আছে
শুধু হারানো দিন, শুধু হাসফাস আর বিলাপ।
আলাপও আছে আমার।
ফাকাবুলির দিকে ধাবমান আর বদ্ধ দরজার দিকে
একমাত্র নিশানা।
প্রকৃতি বা পরমাত্নার মুখোমুখি করে না আমার বিদ্যা।
কানাগলিতে আছি পড়ে, বান্ধব বর্জিত,
শত্রু পরিবেষ্টীত, আন্ধা।
সোনালি অতিত পুণরুদ্ধারের প্রচেষ্টার চেয়ে
পশ্চাদ্মুখিনতাই বেশী আমার।
যে সত্তাটা মধ্যপ্রাচ্যে হৃত
আমার তা পড়ে পড়ে খালি ঘুমায় দিনের বেলা
আর জেগে জেগে সারা রাত দেখে হিন্দি মুভি।
আমার ভেতরটা শুধু গাল পাড়ে আর ফাল পাড়ে।
বিমলানন্দ কেবলি তার গা’গুলানো বিশৃঙ্খলায়,
সর্বদা গেয়ে চলে সে বিশৃঙ্খলার নিজস্ব
সুরে বাধা অদ্ভুত কোরাস।
ইউরোপে যাই আমি আমেরিকা যাই
নারীর শরীর চাটি সাধ্যমত।
………………..
৭৫
সাধারণের উদ্দেশ্যে
সবকিছু জানার প্রয়োজন নেই। প্রশ্ন করতে থাকুন, মহাশয়। শুধু প্রশ্নের পর প্রশ্ন সাজাতে থাকুন। সব উত্তরের প্রয়োজন নেই। একদিন উত্তর খুঁজবে আপনাকে।
………………..
৭৬
সান্তনা
হৃদয় ভাঙলে মন্দ কি?
সুযোগ হলো দেখার
তোমার সেখানে ছিলো কি
আর এখন আছে কি?
………………..
৭৭
বর্ণনা
মায়া মায়া দৃষ্টি কাড়া দুটি বাংলা চোখ।
সুখি সুখি কৃষ্ণত্বকের বাংলা শরীর।
কিপ দিস অ্যান্ড লেট ফল দিস টু
সামওয়ান ডিজার্ভ দিস।
………………..
৭৮
টুকরো অনুভূতি
সব জায়গা থেকে পালানো যায় না,
দেশ এদের মধ্যে অন্যতম। দেশ থেকে
পালালে সব চেয়ে আগে দেশ সংগে যায়।
আবাল আর চুতিয়াদের দেশে ছাগলরাই সর্বেসর্বা।
দেশপ্রেম না শিখে তুমিই বা আর কি করবা?
মানুষ হওয়া সহজ কাজ না। পাশ দিলেই হওয়া যায়না।
অধ্যবসায় ও সাধনা লাগে। বড় শ্রম লাগে, ত্যাগ লাগে।
পরিপক্কতা তাকে বলে না যখন আমরা বড় বড় কথা বলতে শুরু করি,
বরং পরিপক্কতা তাকেই বলে যখন আমরা ছোট ছোট কথা বুঝতে শুরু করি।
আমির খান।
রাতজাগা চোখের জ্বালা নিয়ে
ঠোট যেন তবু হাসে
বুঝিয়ে তুই বল তারে গিয়ে।
কার কাজ আটকানো?
জানি না আমি, তবে জানি
মানুষের কাজ ছাড়ানো।
মানুষ ছাড়িয়ে চলে
আর ছড়িয়ে দেয়।
ভাগ করে খায়।
জগৎ কোন রহস্য
নয়, কাজ করে খায়
কেউ কেড়ে খায়।
সখ্যতা যা মধ্যরাতের সাথে নিস্তব্ধতার
অরণ্যের গভীরতার সাথে নির্জনতার
সকাল বেলার ঘাসের সাথে শিশিরের।
………………..
৭৯
ফুল
শুধু হাত দিয়ে ছোঁয়া নয়,
শুধু দেখাদেখি নয় অপলক,
তুলে তাকে ঘরে নিয়ে
যাবার সময় এখন তোমার।
………………..
৮০
পরিস্থিতি
ভারাক্রান্ত সময়ের গর্ভে ছলাকলাসমৃদ্ধ রাজনীতি ধনুকের
চেহারা নিয়েছে। টানটান সব পক্ষরা।
পোড়ার দেশে সাধারণের স্বপ্ন সব সময় অধরা।
প্রাপ্তির আনন্দ ফিকে হয়ে যায় হারানোর বেদনায়।
………………..
৮১
ভালবাসার অর্থ
ভালবাসা হলো অপ্রাপ্তি ও অপেক্ষার নাম
ভালবাসা মানে ক্রমাগত কিছু খুঁজে বেড়ানো
নি:স্ব হয়ে ছুটে বেড়ানোর এক কথায় প্রকাশ
ভালবাসা মানে বেরিয়ে পড়ে মনকে না ফেরানো।
………………..
৮২
অভ্যস্তের আত্মপ্রকৃতি
লালনের মত মানুষ তোমার রবীন্দ্রনাথের মত ঠাকুর
নজরুলের মত সমন্বয় তোমার মাতুব্বরের মত মাথা
হাজার হাজার কবি তেমন সংখ্যাহীন আছে বাউল
তারপরও মন তোমার পাগল হয়ে ঠাকুর খোঁজে-
কাঙাল তারা মস্ত এক, বোঝো?
গণজাগরণ মঞ্চ? ওয়েল আপনি এখানে দাড়ান?
ইমান আমল রক্ষা কমিটি? আপনি এখানে
আপনি কে? ও আচ্ছা আম্লিগ?
আপনি এখানে বিম্পির সারি থেকে একটু দুরে।
আপনারা কারা বাম? তাহলে এখানে ডানের পাশে দাড়ান
আপনি? সুফিবাদ? তাহলে এই সারিতে দাড়ান
তান্ত্রিক? আপনার লাইন যান্ত্রিকের পাশে ঐখানে
নাস্তিক হলে এখানে, কৃষক শ্রমজীবিদের লাইন এটি, সরে দাড়ান।
কুন্ঠিত হওয়ার কিছু নেই সকল শিক্ষকের জন্য একটাই লাইন,
দাড়িয়ে পড়ুন। আদেশ একটাই শুধু
ছোট থেকে বড় দাড়াবেন, আমি যেন দেখতে পাই সকলকে।
আমি অবাক হচ্ছিলাম না আহবানকারীর আত্নবিশ্বাস দেখে,
১৯৪৭ থেকে যারা অভ্যস্ত তাদের কি অবাক হলে চলে?
অতএব, এমতবস্থায়,
মুচিমেথর, ডোম, সরকারী চাকুরে, বেসরকারী দালাল
ফড়ে, অটোচালক, শিক্ষার্থী, লেখক, কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, পত্রিকার
ঠিকাদার, অনলাইনজীবি, গুপ্তচর, তথ্যফাসকারী, ভ্রাম্যমান যৌনকর্মী,
আচার্য অনাচার্য
সমাজের প্রতিটি শ্রেণী পেশার মানুষ আমরা
সারি সারি দাড়ালাম সকলে, ব্রাদার্সের মাঠে
বর্তমানে যেখানে নিরালা স্কুল।
আত্নরতিপ্রবণ মানুষের কোন সারি না থাকায় আমি
সরে দাড়ালাম ভিড় থেকে, একা।
একজন।
………………..
৮৩
অনুরোধ
শুকিয়ে যাওয়া রক্তের দাগ ও নিরবে ঝরে পড়া অশ্রু
গর্ভবতী মায়ের মত মানচিত্রের কাছে সাক্ষী দিস
উত্তরাধীকার সুত্রে পাওয়া আমার দীর্ঘশ্বাসের।
………………..
৮৪
সাংঘর্ষিক রাজনীতির বলি
গণতন্ত্র যখন রক্ষা করা ও ঠেকানোর চুড়ান্ত পর্যায়ে,
দাউদাউ পুড়ে যাচ্ছে মনুষ্যত্ববোধ আর বিবেক,
পেট্রল বোমা যখন মানুষের গাসওয়া হয়ে আসছে,
তখন,
এক রাতে
কোন এক সময়
বাংলা একাডেমীতে
কেতাবিদের মেলা চলতে থাকার সময়ে,
বহু মানুষজন সেই নগরে, জানেন,
তাদের অট্রালিকাগুলি আকাশ ছোয়া।
তারা হাগে ও মোতে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন জায়গায়,
ছোছে দুধ দিয়ে,
জল কিমবা পানি দিয়ে নয়।
তারা খায় চায়নিজ আর দেখে হিন্দি সিনেমা
তারা আইটেম সং কি জিনিস খুব ভাল জানে, আল্লার কসম।
পাগলে কামড়ানো এক আলোর পোকা এসেছিলেন
সেই নগরে
সেই বই মেলাতে,
সেই রাতে,
পেট্রলবোমা গাসওয়া হয়ে এসেছিল যখন।
এসেই প্রকাশ্যে সে আলোর পোকাটি একটি
পুস্তকে রুপান্তরিত হন।
অবাক হচ্ছেন?
…..ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমন এক জায়গা
যেখানে অসংখ্য আলোর পোকার পুস্তুক হওয়ার ইতিহাস আছে।
………………..
৮৫
পথের ইদুরের কথা
আত্নমর্যাদাবোধ, আত্নসম্মানবোধ, লজ্জ্বা, এ জাতীয় শব্দসমূহ উঠিয়ে দিলে হয় বাংলা অভিধান থেকে, এ সমাজে এগুলির আর প্রয়োজন নেই। আর আমি যখন শান্তিতে নেই তখন আপনার শান্তির তো প্রশ্নই ওঠে না।
জুম্মার নামাজ পড়তে যাওয়ার পথে ইঁদুর দৌড় বলছে ঠাটানো
দুপুরকে- ক্রন্দনরত কান্নার হঠাৎ আহাজারি দিয়ে
ওঠা দেখতে দেখতে আমি ক্লান্ত হচ্ছি না।
আমি লেট লতিফ বুঝেছি অনেক পরে
শল্য চিকিৎসা হয়েছে আমার হার্টের
যা এখন পাথরের সাথে
প্রতিযোগীতায়
নেমেছে
শক্ত
হবার।
স্বার্থের টানাটানিতে সম্পর্কের সুতো ছিড়ে যাচ্ছে,
সাই! বেঁচে থাকার বিষয়টি কেবলই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে
সারিসারি পিপড়ের মুখে সন্তানসম্ভবা ডিম।
ধেয়ে আসা বিপদের গন্ধ পেয়ে বগল
বাজাচ্ছে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের
কারখানাগুলি। অর্থ
না থাকলে
ক্ষমতাও
একদিন
চলে যায়।
এখানে হতভম্ব শাড়ির আঁচল আটকায় ফণিমনসার ঝাড়, আর
থমকানো সময়ের বাজার দর নির্ভর করে আমাদের ওপর,
মাই গড, আপনি জানেন না?
সবচেয়ে নিরাপদ এখন প্রেমের কবিতা লেখা, তুমি আমি আমি তুমি তোমার চুলের খোঁপা,
মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ, আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গ সংক্রান্ত ঝামেলা,
চীনের অর্থনীতির লাফিয়ে লাফিয়ে চলা,
ইউরোপীয় ইউনিয়নে বৃটেনের থাকা না থাকা,
কোন কিছুতে আগ্রহ পাচ্ছিনা,
নেপালের ভুমিকম্পের যে অভিঘাত আমি ঢাকায়
১৮ তলা ভবনের ১৩ তলায় বসে উপলব্ধি করেছি
তাই আমাকে সারাক্ষণ ব্যতিব্যস্ত রাখে।
প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কুকুর ঠ্যাং তুলে
সকাল সন্ধা ভেজায় যে মুক ও বধির দেয়াল
বঞ্চিত মানুষের বুকের গভীরে জমা
শ্লোগান লিখেছিল তাতে এক কবিয়াল।
প্রশ্নেরা হুড়মুড় করে ঢুকে পড়লো
ভেজানো দরজা ঠেলে।
অসংখ্য বন্দুকের মুখে জেরা
তারপর।
হাসছেন?
এটাই হচ্ছিলো আজকাল, বলছি আপনাদের-
যেমন, আপনার মনে কি?
মাথায় কি ?
বা আপনার বুকে? চোখে ? কিমবা হাতে?
আপনার ঠোটের ওপর কি? আপনার কুচকিতে?
ওফ, শালা কেন যে জন্মেছিলাম এই তল্লাটে…
যদি বমি করে দিতে পারতাম উজাড় পেটে?
কি করবো?
………………..
৮৬
প্রেমালাপ
ভালবাসি যেভাবে তুমি বল সুন্দর আমি
ভালবাসি আমাকে যেমন হাসাও তুমি
ভালবাসি আমার চোখ থেকে তোমার চুল সরানো
ভালবাসি মুখের ওপর চুমু মাখানো
ভালবাসি তোমার পার্কে নেওয়া
কোমরের ওপর হাত রাখা
একসাথে সূর্যাস্ত সমুদ্রের বাতাস
ভালবাসি তোমার তাকানো, তোমার গান, হাসি
ভালবাসি জড়িয়ে ধরার পর তোমার পারফিউম
আমার জামার সাথে মেখে যাওয়া
ভালবাসি তোমার ফুল দেওয়া
‘আইলাভইউ’ কথাটা
ভালবাসি তোমার মন পড়তে পারা
তোমার মতামত দেওয়া
ভালবাসি তোমার সরল সহজ কান্না
কোন কিছু গোপনা না করা
দুপুর বেলা যখন ফোন কর শুধু একথাটা বলতে “আমি ভালবাসি”
আমার ভাল লাগে
যখন বলো মিস করছো আমার ভাল লাগে
ভালবাসি যখন আমার সম্পর্কে তুমি বন্ধুদের বল
ভালবাসি তোমার ফিসফিসানো
ভালবাসি তোমার কন্ঠ- যেন আমি স্বপ্ন দেখছি।
ভালবাসি কারন কোন কিছু করতে তুমি লজ্জা পাওনা
আহ! তোমার হতে পেরে আনন্দিত কতইনা!
সারল্য যায় আড়ালে, ভদ্রতা আবডালে
মানুষ নামে ইদুরদৌড়ে, খালি খাবি খায়।
আমাদেরকেও দিয়েছে সে তেমনই এক বন্ধন।
যদি বেধে যায় যুদ্ধ কোন, সাধের ঘর
হয়ে যায় পর
যদি বোমা পড়ে আগুন জ্বলে
সিরিয়াইয়েমেনের মত ভূমি হয়ে ওঠে অঙ্গার
শুধু হাত ধরে থেকো আমার
চেয়ে থাকাকে আশ্রয় দিও তোমার চোখের তলে।
আমার জন্য?
শেষপর্যন্ত?
আর কাকে চাও
বলতো তুমি?
আমার জন্য
কেউ কোথাও
নেই যে বসে
জানো না তুমি?
নিজের জন্য
শেষপর্যন্ত
থাকলে কেউ
সেই মানুষটা
আমার আমি।
আমরা রাজর্ষীদের মুকুটে
শরতের মেঘের মত
সাদা পালক লাগাই,
জগতের জন্য
কিনি জাগরের বীজ।
আমরা ভর বছরের
দড়িবাধা পালিত পশু-
মরে যাওয়ার জন্যই
কেবল মোটাতাজা হই।
অহংকারের স্বৈরাচারিত্বে প্রতি চুল
থাকে না শেষপর্যন্ত আর চুল,
গুনতে পারোনা। তাইনা?
ঐ দুটো যদি হয় চোখ
কেঠায় কয় কারে কানা?
দৃষ্টি তোমার কাজ কি? দেখা ?
দেখে আর কি হবে বলো?
কান তোমার কাজ কি? শোনা?
শুনে আর কি হবে বলো?
আঙুল তোমার কাজ কি? লেখা?
লিখে আর কি হবে বলো?
কিছুতেই যখন কিছু হবেনা
তখন আর কি চুপ থাকি চলো।
পান পাতায় ছাপ থাকা স্মৃতির কারুকাজ
ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে শুধু আজ
হাই ছেড়ে ছেড়ে বলছে সে শুধু
কেন আমি খুলেছি পোড়া ক্ষতের ভাঁজ?
একা তো নই আমি, ভুল ভাবো।
সারাক্ষণইতো ভিড়ভাট্টার মাঝে
কারো না কারো সাথে থাকি।
ফাঁকি? বুঝিনা কি জিনিস, তা কি।
রিকশায় উঠি, আইসক্রিম খাই
আঁধারে পুজোর আলো দেখি।
দীর্ঘশ্বাস আমাকে যম জানে।
সকালে রোদ পোহাই
সন্ধেয় সাজাল, জাবড়ায়ে বসে
ভাত খাই থাল থাল।
কে বলে আমি কাঙাল?
তুমিই বরং ভোদড়, চাড়াল।
আমার কোন কষ্ট নেই।
চায়নিজে গিয়ে মুচকি হাসো?
কাটাচামুচের ছবি দাও?
মজার কোন খাবার খেয়ে
ধড়াস করে ঢেকুর তোলো?
হেসে গড়ায় ঝানুরা সব,
বোঝে তারা আসল হলো
সরপুটি আর কই দেখে
গহীনে তুমি ভিষণ জ্বলো।
ভাল্লাগে না লুকতে গিয়ে কেউ যখন বেরিয়ে পড়ে
ভিষণভাবে, সত্যি করে বলতো তুমি
এভাবে তুমি সত্যি সত্যি তাজা মাছের দু:খ ভোলো।
আমি হাসি বেজায় তখন।
তোমাকে মনের পড়ে যখন।
একাকি মানুষ কাজটা ফেলে
ক্যামেরা নিয়ে দাড়াই গিয়ে
শোকের বাড়ি পুকুর পাড়ে।
আকাশ নামে গভীর জলে।
সকল কিছু ভুলে গিয়ে
মাছরাঙাদের ঝাপিয়ে
পড়া ছবি তুলি।
মনে পড়ে আমার খালি
লকলকানো লাউগাছটার
কচি সবুজ হাসির শরীর।
অন্যের তুরুপের হাস্যকর তাশ
আমি নিষ্ঠুর বলির পাঠা কারো
ভিনদেশীদের ঘরামি আমি
নিজেই পরেছি নিজের ফাঁস।
লাগামহীন সময় ফোটাচ্ছে পরিহাসের হুল
ভেবে দ্যাখো ছিল কিনা তোমার কোন ভুল।
………………..
৮৭
কুয়োর ব্যাঙের উদ্দেশ্যে
ঘুরলি ফিরলি খা’লি মুতলি আর হাগলি
কুয়োর ব্যাঙ তুই কুয়োর মধ্যিই থাকলি
প্যাটটা ও চ্যাটটা ছাড়া আরকি ভাবলি?
মধ্যরাতে মদনা তুমি বদনা খোঁজো আমার বাড়ী?
বদনা এখন ভিন্ন কোন সুখের বাড়ী, সাগরদাড়ী।
বদনা ভুলে তুমি বরং পুকুর পাড়ে বাগানে যাও,
ঠান্ডা হয়ে ধোয়ার সময়ে পুকুরেতে ঝাপ দাও।
Please click the comment button